বিউটি সার্কাস - সিনেমায় চিরাচরিত বাংলার গল্প
মনে আছে ছোটবেলার কথা? মেলায় গিয়ে নাগরদোলায় চড়া, বায়োস্কোপ দেখা এবং মেলার বিশেষ আকর্ষণ সার্কাস দেখা। আজকাল সার্কাসের দেখা পাওয়া মুশকিল কিন্তু আমাদের সেই পুরোনো ঐতিহ্য ও স্মৃতিকে তুলে আনলেন পরিচালক মাহমুদ দিদার তার ছবির মধ্য দিয়ে। মাহমুদ দিদার পরিচালিত 'বিউটি সার্কাস' সিনেমার গল্পটা, না বিউটির না সার্কাসের, গল্পটা আমাদের।
গল্পটা একজন নারীর সংগ্রামের, একজন সার্কাস কর্মীর সফলতার ও একটা মেয়ের বাবার প্রতি ভালবাসার। বিউটি একটি সার্কাস পরিচালনা করে, নিজের নামে পরিচালিত সার্কাসটির নাম ' বিউটি সার্কাস'। বানিয়াশান্তা নামক একটি গ্রামে সার্কাস দল নিয়ে গেলে বিউটির সামনা হয় বেশকিছু পুরুষ মানুষজনের। কিন্তু, বিউটি খুঁজছে এমন একজন মানুষকে যার সাথে জড়িয়ে আছে তার অতীত। হঠাৎ, মেলায় ঘটে যায় একটি খুন, যার জেরে বন্ধ হবার উপক্রম বিউটির সার্কাস! কাকে খুঁজছে বিউটি, কি তার অতীত, সার্কাস দলের কি হয় শেষপর্যন্ত! এতগুলো প্রশ্নের উত্তর রয়েছে মাহমুদ দিদার পরিচালিত 'বিউটি সার্কাস' এ।
বিউটি সার্কাস ছবিটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। ছবিটি দারুণভাবে একটি সার্কাস দলের গল্প বলেছে। যতদুর জানা যায়, এই বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশে এটাই প্রথম কাজ। ছবিটির চিন্তাভাবনা বেশ ভালো ছিল, অভিনয় এবং সবমিলিয়ে ছিলো দেখার মতো। ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, মিউজিক সুন্দর। শারমিন সুলতানা সুমির গানটি ও ইভান এর গানটি ছবিটি দেখার সময় শ্রুতিমধুর লেগেছে। ছবিটির ক্যামেরার দায়িত্বে ছিলেন কামরুল শুভ। নাটকের এই সিনেমাটোগ্রাফারের প্রথম সিনেমার কাজ এটি এবং তিনি বেশ সুন্দর করে কাজটি করেছেন। ছবিটি দেখার সময় প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোর আবহ বেশ ভালো লেগেছে।
ছবিটিতে জয়া আহসান সবচেয়ে ভালো অভিনয় করেছে। তার সাথে হাসি-কান্না যেন নিজেকে ছুয়ে যায়। চরিত্রের সাথে একটা মানুষ কতটা মিশতে পারেন তা তার অভিনয় দেখলেই বোঝা যায়। আবার, রংলাল চরিত্রে এবিএম সুমন কি দারুণ। তার হাবভাবে গাম্ভীর্যপূর্ণ একটা ব্যাপার ছিল। জমিদারের নাতি চরিত্রে ফেরদৌস সুন্দর করেছেন। কিছুটা নেগেটিভ শেডের ক্যারেক্টারে তার অভিনয় ভালো লেগেছে। গাজী রাকায়েত ও শতাব্দী ওয়াদুদ এই ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বহন করে। হুমায়ুন সাধু কে দেখে অনেকটা সময় চোখ বেয়ে জল পড়েছে, তাকে ট্রিবিউট দিয়ে একটা গান ও রয়েছে ছবিতে। মাহমুদ দিদার চেয়েছেন মাটির মানুষের কাছাকাছির একটা গল্প বলতে। এই প্রচেষ্টা আপনার ভালো লাগবে। হলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন চিরাচরিত বাংলার গল্পের এই সিনেমাটি।
লেখকঃ মাহাদি রহমান (চলচ্চিত্র সমালোচক)