এই সপ্তাহের সিনেমা ট্রেন্ড

এই সপ্তাহের সিনেমা ট্রেন্ড


একজন সিনেমাপ্রেমী প্রতিনিয়ত খোঁজ রাখেন কোথাও নতুন কিংবা ভালো কোনো সিনেমা রিলিজ হচ্ছে কিনা। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার সিনেমা মুক্তি পায় থিয়েটারে আর স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোতে। হাজার হাজার সিনেমার ভীড়ে দেখার মতো সিনেমা আর ক'টাই বা থাকে? তবে দর্শকের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে দর্শকপ্রিয় সিনেমাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। এই সপ্তাহে অনেকগুলো সিনেমা ট্রেন্ডে এসেছে যার বেশিরভাগই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক এই সপ্তাহের সিনেমা ট্রেন্ড এবং কেমন ছিলো সেগুলো।

১. Bullet Train

গল্পের শুরু হয় জাপানের বুলেট ট্রেনে যেখানে কয়েকজন গুপ্তঘাতক একই উদ্দেশ্য উঠে। জাপানের অপরাধ জগতের রাজা হোয়াইট ডেথ যাদের এই মিশনে পাঠায় তারা ব্যর্থ হলে হোয়াইট ডেথ ট্রেনের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়! খারাপ ভাগ্যে জর্জরিত লেডিবাগ ওরফে ব্র‍্যাড পিট প্রতিটি স্টপেজে নামতে চাইলেও কোনো না কোনো কারণে নামতে পারে না। লেডিবাগ কী অন্য গুপ্তঘাতকদের মেরে লাস্ট স্টপেজ কিয়োটা স্টেশনের আগেই নামতে পারবে না-কি হোয়াইট ডেথের হাতে মারা যাবে? জানতে চাইলে দেখে ফেলুন টুইষ্ট, কমেডি আর একশনে ভরপুর মুভিটি।

মুভির সিনেমাটোগ্রাফি, বিজিএম, একশন কোরিওগ্রাফি অসাধারণ ছিলো। এই মুভি বিশেষ ভালো লাগার অন্যতম কারণ মুভির একশন কোরিওগ্রাফি গুলো ইকো উয়েসের হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমবেটের মতো লেগেছে। অভিনয়ের কথা বললে ব্র‍্যাড পিটের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই, তবে  অন্য ক্যারেক্টারগুলোর মধ্যে লেমন চরিত্রটা মনে ধরার মতো। যারা একশন মুভি লাভার অনায়াসে দেখতে পারেন।

২. Bodies Bodies Bodies

একটি রিমোট ম্যানসনে কিছু বন্ধুরা মিলে পার্টির আয়োজন করে। পার্টি চলাকালীন সকলে মিলে একটি অদ্ভুত গেম খেলার পরিকল্পনা করে। গেমটির নিয়ম খুবই সাধারণ, সকলকে বাড়ির অন্ধকার কক্ষে আলাদা আলাদা পজিশনে থাকতে হবে এবং যে যাকে আগে টাচ করবে তাকে মৃত হয়ে পড়ে থাকার ভান করতে হবে। এবং পরবর্তীতে প্লেয়ারদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আসলে কে তাকে মারলো এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি (যিনি ভান করছেন) কোনোভাবেই অন্যান্য প্লেয়ারদের কোনো প্রকার ক্লু দিয়ে সাহায্য করতে পারবে না। কিন্তু সমস্যা তখনই শুরু হয় যখন তাদেরই একজনের সত্যিকার মৃতদেহ বাড়ির বাইরে পাওয়া যায়।

সিনেমাটির স্ক্রিনপ্লে চমৎকার কাহিনী। বিরক্তিবোধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, কারণ রানটাইম মাত্র ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট। সিনেমায় কিছু সমকামী সিন আছে যেটা চাইলে এড়িয়ে যেতে পারেন।

৩. Fall

অ্যাডভেঞ্চার অনেকের জন্য এক ধরনের নেশা। হাইকিং, স্কাই ডাইভিং, প্যারাসাইকেলিং, পাহাড় পর্বতে উঠা সহ আরো অনেক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার আছে । তবে অ্যাডভেঞ্চার অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়। ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চারে গেলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, অনেকের মৃত্যুর কারণও হয় এটি। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীরা তা অগ্রাহ্য করেই প্রতিনিয়তই অ্যাডভেঞ্চারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। 

অ্যাডভেঞ্চার লাভার তিন বন্ধুর একটি পাহাড়ে ওঠার সময় এক বন্ধু পড়ে মারা গেলে, বাকি দুজন দুঃসাহসিক অভিযান করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার যাদের রক্তে, তারা কতদিন তা দমিয়ে রাখতে পারে? তাই তারা আবার অ্যাডভেঞ্চারে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবার তাদের লক্ষ্য শহর থেকে দূরে একটি নির্জন জায়গায় থাকা ২০০০ ফুট উঁচু একটি টাওয়ার। তারা ভুলক্রমেও বুঝতে পারে না কি ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। তারা কি নিরাপদে ফিরে আসতে পারবে? জানতে দেখে নিতে পারেন এই মুভিটি। 

এই সিনেমাটির গল্প বিল্ডআপে বেশি সময় নেয়নি। প্রথম ৪৫ মিনিট স্কিন থেকে চোখ সরানো যাচ্ছিল না। কিন্তু সেকেন্ড হাফে কিছু প্লট হোল আর ডিরেকশনের দুর্বলতা চোখে পড়লেও দেখে নেয়ার মতো সিনেমা। ডিরেকশন ভালো হলে, এই মুভিটি আরো অনেক ভালো হতো। সারভাইভাল থ্রিলার যেমন: 127 ঘরানার মুভি পছন্দ হলে একবার এই মুভিটি দেখে নিতে পারেন।

৪. Chup

সিরিয়াল কিলিং নিয়ে বলিউডের মুভিগুলোর মধ্যে এই সিনেমা অনেক দিন রাজ করবে নিশ্চিত আর তার একমাত্র কারণ হলো এটি ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড। একটা সিনেমা রিলিজের পর ক্রিটিক্সদের কি করা উচিত-অনুচিত সেটা এই সিনেমা দেখার পর যেকোনো ক্রিটিকসই ভালো বুঝবে। 

বোম্বেতে প্রতি সাপ্তাহে একজন করে মুভি ক্রিটিক্স খুন হচ্ছে, তাও আবার বিভিন্ন স্টাইলে। কে করছে, কেনো করছে সেসব তদন্তে নেমেছে পুলিশ। সিরিয়াল কিলিং মুভি হিসেবে খুব এনজয়েবল মুভি এটি, সেই সাথে ছোট্ট একটি লাভ স্টোরিও আছে। আর মুভিতে ব্যাবহার করা মিউজিক ট্র‍্যাকগুলোও অসাধারণ ছিলো। সবদিক মিলিয়ে ভালো একটি সিনেমা, সময় হলে দেখে নিতে পারেন।

৫. Orphan: First Kill

সাইকো-হরর বানাতে আসলে দুটো জিনিস নির্মাতার মাঝে থাকা লাগবেই। প্রথমটা হচ্ছে, মনোবৃত্তি সম্পর্কে ভাল ধারণা আর পরেরটা হচ্ছে ভয় পাওয়ার জন্য বিল্ড আপটা ভাল করা। Orphan এর দুইটা ছবিই আধুনিক সাইকো হররের বেশ ভাল উদাহরণ। আজকাল শুধু রক্তারক্তি আর হাউ মাউ দেখিয়ে হরর জমানো যায় না, প্রোটাগনিস্ট এর ক্যারেক্টারটাও ভালভাবে লিখতে হয়। Orphan এর এস্থারের চরিত্রটা খুব ওয়েল প্ল্যানড!

প্রথমটায় এতিমখানা থেকে যে এস্থারকে নিয়ে যাওয়া হয় একটা পরিবারে সেখানেই জানা যায় এস্থার কী ঘটনা ঘটিয়ে গেছে সেখানে যাবার আগে। তো এই সিনেমায় এস্থারের আগের ঘটনাটা দেখানো হয়েছে। এস্তোনিয়ার সার্নে ইন্সটিটিউটে দেখা যায় লিনা নামে হাইপিটুইটারিজমে আক্রান্ত মেয়েটিকে যাকে সবচেয়ে ভয়ংকর বলে ট্রিট করা হচ্ছে। একদিন সে কৌশলে পালিয়ে যায় অনেকগুলো খুন করে। তারপর হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের সাইটে গিয়ে সে নিজের আপডেট দেয়। সেই আমেরিকান পরিবার তাকে এসে নিয়ে যায় তাদের হারিয়ে যাওয়া বাচ্চা মনে করে। এরপর ঘটতে থাকে লোমহর্ষক ঘটনা।

প্রচন্ড হররপ্রেমীদের এই সিনেমা ভাল নাও লাগতে পারে কারন এখানে ভৌতিক ব্যাপার থেকে ক্রাইমটা বেশি। প্রথমে মূল দৃষ্টি এস্থারের ওপর থাকলেও পরে সে নিজেই ক্রাইসিস ফেস করে। এস্থার চরিত্রে ইসাবেলা ফারম্যান অসাধারন! জুলিয়া স্টিলিসও মায়ের ভূমিকায় ভাল করেছেন। এছাড়াও জনপ্রিয় টিভি সিরিজ গেম অফ থ্রোন এর প্রিকুয়্যাল House Of The Dragon এই সপ্তাহের দেখা ট্রেন্ডি সিরিজ।

Next Post Previous Post